Homeবাংলা শাখাসৌদি আরবে সেনা পাঠানো ও কিছু কথা

সৌদি আরবে সেনা পাঠানো ও কিছু কথা

১৯৮৫ সালের শেষ দিকে আমরা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে চতুর্থ টার্মে দুই বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণের সবচেয়ে কষ্টকর মহড়া, এসিড টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তৃতীয় টার্মে একবার ওই মহড়ায় অংশ নিতে হয়েছে এক কোর্স সিনিয়রদের ছায়াশত্রু হিসেবে। বেশ খাটুনির এক মহড়া বৈ কি। হঠাৎ করে আমাদের জানানো হলো- চতুর্থ টার্মের এসিড টেস্ট বাতিল করা হয়েছে এবং ওই সময়টাতে পাসিং আউট প্যারেডের অতিরিক্ত প্র্যাকটিস করতে হবে। পাসিং আউট প্যারেডে আমরা যে ক’জন ক্রসবেল্ট হোল্ডার অর্থাৎ আন্ডার অফিসার ছিলাম, তাদের এই নতুন আদেশে খুশি-অখুশি দুটোই হতে হলো। ঝক্কি-ঝামেলার এসিড টেস্ট করতে হবে না, এটি অবশ্যই খুশির খবর।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে কমিশন পাওয়ার সর্বশেষ ধাপ, পাসিং আউট প্যারেড প্র্যাকটিস করা অখুশি হওয়ার বিষয়। তৃতীয় টার্মে থাকতেও আমাকে করপোরাল হিসেবে জ্যেষ্ঠ কোম্পানি জাহাঙ্গীর কোম্পানিকে ১২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের পাসিং আউট প্যারেডে কমান্ড করতে হয়েছিল। এ এক জটিল ব্যাপার যা স্নায়ুর ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করে। তাই মেজাজটা বেশ খিটখিটে হয়েই থাকল। আমরা স্বাভাবিক কারণেই জানতে চাইলাম, কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ মহড়া বাদ দিয়ে পাসিং আউট প্যারেডকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হলো? আমাদের কোর্সের ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার অর্থাৎ কোর্সের সিনিয়র মোস্ট ক্যাডেট হুমায়ুন (বর্তমানে সেনাসদর দফতরে অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল) খোঁজ নিয়ে জানাল, সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একজন প্রিন্স তার বিশাল দলবল নিয়ে আমাদের পাসিং আউট প্যারেড দেখতে আসবেন।

সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক- বিশেষ করে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর জন্য যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই কর্তৃপক্ষ একটি নিখুঁত ও জাঁকজমকপূর্ণ পাসিং আউট প্যারেড নিশ্চিত করতে চান। আমরা সকাল, দুপুর ও বিকেল পাসিং আউট প্যারেড প্র্যাকটিস করতে লেগে গেলাম। ১৯ ডিসেম্বর মূল প্যারেড অনুষ্ঠিত হলো। কয়েকটি হেলিকপ্টারে ভিভিআইপিদের সাথে সৌদি অতিথিরা এলেন। প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধান অতিথি হিসেবে সালাম গ্রহণ করলেন। আমরা ১৩ তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সেনাবাহিনীতে কমিশন পেলাম। ওই পাসিং আউট কুচকাওয়াজটি ছিল সমসাময়িক কালের সবচেয়ে জৌলুশপূর্ণ ইভেন্ট।

এর আগে ১৯৮৪ সালের ১৮ জানুয়ারি যখন মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেই, তখন আমাদের যে ক্যাডেট অ্যাকোমোডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলো ছিল- নতুন ঝকঝকে আধুনিক সুবিধাসংবলিত ব্যারাক। আমাদের কোর্স ছাড়া আগের কোর্সের ক্যাডেটরা এসেই প্রথম ওই সব কোম্পানি ব্যারাকে থাকতে পারেননি। তারা পেয়েছিলেন পুরনো ব্যারাক। প্রথম টার্মের কষ্টকর কয়েকটি দিন যাওয়ার পর জানতে পারলাম, ওই সব নতুন অবকাঠামো তৈরি হয়েছে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায়। এখনো ওই চারটি বিল্ডিং- বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, রউফ, হামিদ ও মোস্তফা কোম্পানি ব্যারাক মিলিটারি একাডেমিতে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্বের তৎকালীন কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায়, সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর। এর আগে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সাথে একান্তে আলাপ হয়েছিল তদানীন্তন সৌদি বাদশাহ ফয়সালের। বাংলাদেশে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দ্রুত সশস্ত্রবাহিনীর অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রতি নজর দেন। সাংবাদিকতা জীবনে সাবেক সেনাপ্রধানসহ প্রায় বিশজন সিনিয়র কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে জানতে পারি, সে সময় কিভাবে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অবকাঠামো বৃদ্ধি করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে, জেনারেল জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার সময় সেনাবাহিনীতে ছিল মাত্র এক ডিভিশন সৈন্য। সেসময় ভারী সমরাস্ত্র সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণে বাধা ছিল প্রধানত দু’টি।

একটি আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়া ও ভারতীয় অক্ষশক্তির চাপ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো এক ডিভিশন থেকে পাঁচ ডিভিশনে উন্নীত করা ছিল প্রায় অসম্ভব। তখন সৌদি আরবসহ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে। চীন সরবরাহ করে ট্যাংক, কামানসহ যাবতীয় সমরাস্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে কৌশলগত বাধা অপসারণে সহায়তা করে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে পাঁচটি ডিভিশনের অবকাঠামো তৈরি করা সহজ ছিল না। কিন্তু তা সম্ভব হয়েছিল। অন্য দিকে, নৌবাহিনীর জন্য সংগ্রহ করা হয় কয়েকটি ফ্রিগেট, মিসাইল বোট, টর্পেডো বোট ও সাবমেরিন চেজার।

বিমানবাহিনীর জন্য চীন থেকে আসে এফ-৬ যুদ্ধ বিমান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেল হেলিকপ্টার। সামরিক পর্যায়ে সহায়তার পাশাপাশি ওই সময় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমবাজার প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত হয়, যার সুফল আমরা এখনো পাচ্ছি। যে রেমিট্যান্সের ওপর বাংলাদেশ টিকে আছে, তার ভিত্তিই হলো মধ্যপ্রাচ্য। সৌদি আরবের সহায়তার কথা হয়তো পুরোপুরিভাবে কখনোই জানা যাবে না গোপনীয়তার দরুন। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, আরব দেশগুলোসহ তুরস্ক আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসার পরও সেসব সহযোগিতা আগের মতো অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ ইরাকি পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিনিময়ে ওই দেশ থেকে ৩৫-৩৬টি যুদ্ধ বিমান ক্রয়ের আর্থিক সহায়তা পায় আশির দশকে। এরপরে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশের সাথে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর গভীর সম্পর্ক স্থাপন আরো উল্লেখযোগ্য।

১৯৯০ সাল। ২ আগস্ট ইরাক কুয়েত দখলের উদ্দেশ্যে সামরিক অভিযান শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দখল করে নেয় পুরো কুয়েত রাষ্ট্র। পাশের আরবরাষ্ট্রগুলো পড়ে যায় হুমকির মুখে। সৌদি আরব আশঙ্কা করে, এরপর হয়তো ইরাকি বাহিনী তাদের দেশে প্রবেশ করবে। পুরো বিশ্ব প্রতিবাদে মুখর ওঠে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত হয় সামরিক জোট। শুরু হয় ‘অপারেশন ডেজার্ট শিল্ড’। এর উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে জোট গঠন, সৈন্য মোতায়েনের কাজ শেষ করা এবং সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তখন যেসব দেশ প্রথম কাতারে সৌদি আরবের সহায়তায় সৈন্য পাঠিয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। তদানীন্তন ব্রিগেডিয়ার হাসান মশহুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় এক ব্রিগেড সৈন্য পাঠানো হয় সে দেশে। ওই সৈন্য দলে ছিলেন ওই সময়ের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। হাসান মশহুদ চৌধুরী ও ইকবাল করিম ভূঁইয়া পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ উল্লিখিত জোটে যোগ দিয়েছিল এ কথা মাথায় রেখে যে, ক্ষুদ্র দেশকে বড় প্রতিবেশী গায়ের জোরে দখল করে নেয়া অন্যায় এবং তা করলে বিশ্ব সম্প্রদায় যে বসে থাকবে নাÑ সেই আস্থা পাওয়ার জন্য। জেনারেল এরশাদ অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ব্যাপক প্রতিকূলতা সামলে দৃঢ়চিত্তে সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন ভারত ওই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মার্কিন জোটে যাওয়ায় বাংলাদেশের কূটনীতি যেমন সফল হয়, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

জোটবদ্ধ দেশগুলোর সেনা মোতায়েন, পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় অপারেশন ডেজার্ট শিল্ডের দ্বিতীয় ধাপ। ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ নামের ওই ধাপে কুয়েত মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সশস্ত্রবাহিনী সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ আক্রমণে সরাসরি অংশ না নিলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পরে কুয়েতে মাইন অপসারণের দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট। ওই যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগত দক্ষতা প্রমাণিত হওয়ার কারণেই মূলত জাতিসঙ্ঘ শান্তি রক্ষা মিশনে ব্যাপকভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

পাশাপাশি, ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের দুর্দিনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ইরাকি সৈন্যদের কাছ থেকে দখল করা, বেশ কিছু ুভারী সমরাস্ত্র প্রদান করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ট্যাংক। এসব ট্যাংক খোলাহাটি ও ময়মনসিংহে (পরে ঘাটাইলে স্থানান্তরিত) দু’টি ট্যাংক রেজিমেন্টসহ অন্যান্য সাঁজোয়া রেজিমেন্টে ভাগ করে দেয়া হয়। এ ছাড়াও কুয়েতে ‘অপারেশন কুয়েত’ পুনর্গঠনে বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়, যা এখনো চলমান আছে।

এ দিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সৌদি আরবে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার সৌদি আরব সফরকালে এ নিয়ে সিনিয়র সৌদি সেনা কর্মকর্তা এবং ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশনের (আইএমসিটিসি) কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল রাহিল শরিফের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তা হলে বাংলাদেশ সেখানে দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য পাঠাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশী সেনারা ইয়েমেন সীমান্তে মাইন অপসারণের কাজ করবে এবং আইএম সিটিসি’র সদর দফতরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাকর্মকর্তা বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাবেন। সৌদি সফরকালে সৌদি সরকার বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে ‘কিং আব্দুল আজিজ মেডেল অব এক্সিলেন্স’ পদক দিয়েছে। যা নিঃসন্দেহে গৌরবের ব্যাপার।

আইএমসিটিসি যখন গঠিত হয়েছিল, তখন বাংলাদেশকে কার্যকরভাবে জোটে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। তবে বাংলাদেশ সরাসরি সৈন্য পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করে জানায় যে, শুধু পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনা আক্রান্ত হলে সৈন্য পাঠানো হবে। কিন্তু এবার সেই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে। সৌদি আরবে এবার যে সৈন্য পাঠানো হবে, তাদের করণীয় নিয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই বলতে পারেনÑ আমাদের সৈন্যরা কেন আরেকটি মুসলিম দেশ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে? স্বাভাবিকভাবেই এতে প্রাণহানিও হতে পারে। এ ব্যাপারে সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে ইতোমধ্যে যেসব মতামত উঠে -এসেছে তাতে দেখা যায়- অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ‘কেন সৌদি আরব-ইয়েমেনের দ্বিপক্ষীয় সমস্যায় বাংলাদেশ একটি পক্ষ নিতে যাবে?’ আবার অনেকের মতে সৌদি আরব ‘আগ্রাসন’ চালিয়েছে ইয়েমেনে এবং তাদের অবরোধের কারণে সেখানে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কেন একপক্ষের সহায়তায় এগিয়ে যাবে? এ ধরনের আরো তর্ক-বিতর্ক চলছে নানা ফোরামে। বিষয়টিকে অবশ্য হালকা করে দেখার উপায় নেই। তবে এটা বলা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, বিশ্ব ও আরব এলাকার রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ কখনো অন্যায্য কিছু করেনি। সৌদি আরব-ইয়েমেন যুদ্ধে একতরফাভাবে কাউকে দায়ী করাও যুক্তিযুক্ত নয়।

ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের পেছনে যে ইরানের আইআরজিসি বা রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কোর ও গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য আছে সেটিও বিবেচ্য বিষয়। যা হোক, এ বিষয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হতে পারে। যতটুকু জানা গেছে তাতে বাংলাদেশী সৈন্যরা ইয়েমেনের সাথে কোনো যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেবে না। তারা স্থলমাইন অপসারণের কাজে নিয়োজিত থাকবে। আর তারা থাকবে আইএমসিটিসির আওতায়। এ ব্যাপারে জনগণের মনে যাতে নেতিবাচক ধারণার জন্ম না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সেনা পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা। আমাদের আরো মনে রাখতে হবে, সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। আমরা যদি সৌদি আরবের সাথে ভালো সম্পর্ক না রাখি, তাহলে সেই বিরাট শ্রম বাজার হারাতে পারি। একই সাথে, অন্যান্য আরব দেশও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। মোট কথা, আমাদের জাতীয় স্বার্থকেই সবার ওপরে প্রাধান্য দিতে হবে। কোনো দেশ বা জোটের সাথে গেলে আমাদের এই চরম মাত্রার ঘনবসতিপূর্ণ ও ক্ষুদ্রাকৃতির দেশটির লাভ কতটুকু সেটি মাথায় রাখতে হবে, সব আবেগকে দূরে ঠেলে দিয়ে।

বাংলাদেশ বৃহত্তর পরিসরে সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে গঠিত মুসলিম সামরিক জোটে যোগ দিয়ে এবং সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা যায়। ১৯৯০-৯১ সালে অপারেশন ডেজার্ট শিল্ড ও ডেজার্ট স্টর্মে যোগ দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্বদরবারে পেশাদারিত্বের আলোকছটা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। সে সময় থেকেই বিশ্ব জানতে পেরেছিল, বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশও সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারে। জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরসহ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যেভাবে সুনামের সাথে সশস্ত্রবাহিনী কাজ করছে, এর দ্বার খুলে দিয়েছিল সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের ঘটনা। এবারো সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অভিনন্দন পেতে পারে। এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিজ্ঞতায় আরো সমৃদ্ধ করবে, সচলতার দুয়ার খুলে দেবে।

মূল উপসম্পাদকিয়-টি দৈনিক নয়াদিগন্ত-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ প্রকাশ করা হয়েছিল।

মূল লিঙ্কঃ সৌদি আরবে সেনা পাঠানো ও কিছু কথা

Abu Rushd, Editor in Chief, Bangladesh Defence Journal
Editor in Chief at Bangladesh Defence Journal | Website |  + posts

Abu Rushd, the President of the Institute of Strategy and Tactics Research (ISTR), is a towering figure whose unparalleled experience spans military service, defense journalism, and global intelligence analysis. A former military officer turned investigative journalist, Abu Rushd brings over three decades of expertise in national security, international relations, and defense intelligence, making him an authoritative voice in shaping strategic discourse on global security challenges.

As a pioneer of defense journalism in Bangladesh, Abu Rushd has continuously pushed the boundaries of investigative reporting. He introduced defense and intelligence coverage into Bangladeshi media and established the Bangladesh Defence Journal, the country’s only publication dedicated to these critical issues. His in-depth understanding of intelligence agencies, military operations, and insurgency conflicts is reflected in his eight widely acclaimed books, with works cataloged in prestigious institutions like the University of Chicago, Yale University, and the University of Toronto.

Rushd's fearless journalism has taken him from the conflict zones of Sierra Leone to the reconstruction efforts in South Sudan. He has served as an official media partner at global defense expos, providing high-level analysis and insights into international security operations. His work on intelligence agencies, including his influential book on Indian espionage RAW in Bangladesh, stands as a testament to his commitment to uncovering hidden geopolitical forces.

As the President of ISTR, Lt. Abu Rushd's leadership reflects a rare combination of military precision, investigative rigor, and intellectual boldness. His visionary approach is essential for advancing strategic research that influences policy and shapes the future of global security.

Popular

Latest