Homeবাংলা শাখালাঞ্ছিত গণতন্ত্র

লাঞ্ছিত গণতন্ত্র

২০০৯ সালের ১৩ জুন। প্যারিসের রাস্তায় হাঁটছি ভবঘুরের মতো। এলিসি প্রাসাদের সামনে পরিচয় দক্ষিণ ভারতীয় এক প্রকৌশলী, মি. বিজালীর সাথে। চাকরি করেন আবুধাবিতে, প্যারিস ঘুরেছেন বহুবার। আমাদের দু’জনই বাদামি চামড়ার, ভারতীয় উপমহাদেশের। নিঃসঙ্গ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশের একজনকে পেয়ে মন চাঙ্গা হয়ে উঠল। অন্তত একা হওয়ায় ক্যামেরায় ছবি তোলার যে সমস্যা ছিল তা কেটে গেল। তার সাথে প্যারিস ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করলাম। ‘সাঁজেলিজ’- এর ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসময় এসে দাঁড়ালাম ‘প্লাস দ্য লা কন্কর্ড’ (Place De La Concorde) স্কোয়ারের সামনে। সম্রাট পঞ্চদশ লুই-এর ভাস্কর্যটিকে কেন্দ্র করে একসময় প্লাস দ্য লা কন্কর্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ভাস্কর গ্যাব্রিয়েলের নকশানুযায়ী, ১৭৫৫ থেকে ১৭৭৫ সময়কালে এই স্কোয়ারটি নির্মিত হলেও ফরাসি বিপ্লবের পর ১৭৯২ সালে রাজা লুইয়ের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে এর নামকরণ করা হয় ‘প্লাস দ্য লা রেভ্যুলুশান’। এর এক কোণে ১৭৯৩ সালে স্থাপন করা হয় গিলোটিন। ওই বছর ২২ জানুয়ারি এই গিলোটিনেই রাজা ষোড়শ লুইয়ের মাথা ছিন্ন করে উপস্থিত জনতার সামনে উপস্থাপন করে বিপ্লবীরা। তবে এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। শুরু হয় ফরাসি বিপ্লবের কালো অধ্যায় ‘রেইন অব টেরর’। ১৩ মে স্কোয়ারের আরেক প্রান্তে গিলোটিন স্থাপন করে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হলো ১৩৪৩ জনকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- মাদাম রলাঁ, সারলৎ ক’ দ্যে, রানী মারী আঁতোয়াৎ প্রমুখ। বিপ্লবীরা যখন প্রতিবিপ্লবী হিসেবে চিহ্নিত মাদাম রলাঁকে বেদির ওপর নিয়ে যায় গিলোটিনের ধারালো পাতে মাথা কেটে ফেলার জন্য, তখন তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিৎকার করে তার সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন – ‘O Liberte, que de crimes on commet en ton!’- ‘হে স্বাধীনতা, তোমার নামে কত না অপরাধ সংঘটিত হয়’! (Oh Liberty, what crimes are committed in thy name!)। পরবর্তীতে অবশ্য স্কোয়ারটির নাম পাল্টে আগের নাম-‘প্লাস দ্য লা কনকর্ড’ রাখা হয়েছে।

মাদাম রলাঁ’র এই উক্তিটি নিয়ে হয়তো অনেক উপমাই দেয়া যায়। ‘বুদ্ধি মুক্তির আন্দোলন’ এ দেশে শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে। কিন্তু সেই বুদ্ধির মুক্তি কতটুকু ব্যাপ্ত হয়েছে আজ তা হলফ করে বলতে পারছি না। প্লাস দ্য লা কনকর্ডে দাঁড়িয়ে তাই রলাঁর উক্তিটি যখন মনে পড়ছিল তখন মাতৃভূমির প্রতিচ্ছবি মনের পটে ভেসে উঠেছে বারবার।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু তারপর? স্বাধীনতা মানে যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার এ দেশে সেসব কতদূর এগিয়েছে, তা আজ কমবেশি সবাই বুঝতে পারেন। মনে পড়ে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল নৈরাজ্যকর অবস্থা। রক্ষীবাহিনী তা দমনের নামে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাজার হাজার মেধাবী তরুণ-যুবকের ওপর। ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ের জন্ম দিয়ে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। পরে জিয়াউর রহমানও তারই বিশ্বস্ত অফিসারদের হাতে শিকার হন বর্বর হত্যাকাণ্ডের। জাতির ঘাড়ে চেপে বসে সামরিক স্বৈরাচার-এরশাদ। তাকে হঠানোর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দুটি পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে একাত্মতা প্রতিষ্ঠিত হলো। কিন্তু আবারো হোঁচট। একের পর এক ছন্দপতন।

এসবের ইতিহাস বলার কি প্রয়োজন আছে? শুধু ২০০৭ সালে ‘ওয়ান ইলেভেন’- পরবর্তী হাফ সুশীল হাফ সামরিক ‘মহা শাসনকালের’ কথা উল্লেখ করা যায়। তখন দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হলো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করার সময় ক্ষমতা দেখানোর দুরন্ত ইচ্ছা থেকে পুরুষ পুলিশ দিয়ে তাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হলো। তখন একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করার সময় ক্ষোভ থেকে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখলাম ওই দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে। প্রশ্ন করেছিলাম, পুলিশের মাঝে কি কোনো মহিলা সদস্য ছিলেন না? একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে, একজন নারীকে কেন পুরুষ পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে নিয়ে যেতে হবে? আরেক দিকে, ভেঙে ফেলা হলো জিয়ার সন্তানের কোমর। এমনকি একজন সাবেক সেনাপ্রধানকে চরম অসুস্থাবস্থায় আদালতের কাঠগড়ায় নিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হলো ‘তাহারা কি না করিতে পারেন’! এরপর যেভাবেই হোক, একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বিপুল ভোটে ক্ষমতায় এলো বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল। জাতি আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচল। আশ্বস্ত হলো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসবে বলে। সেই অধিকার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তা বলতে চাই না। শুধু বলতে পারি, দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেও আজ যখন লিখতে বসি, তখন ভয় ঘিরে ধরে চারদিক থেকেই। অজানা আশঙ্কায় বিচলিত হয়ে পড়তে হয়। এই যে আশঙ্কা ও ভীতি, তা কি একটি সুস্থ সমাজের লক্ষণ? সমাজকে সুস্থ পথে চালানো রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব। আমলাতন্ত্র, পুলিশতন্ত্র, গোয়েন্দাতন্ত্র তা করতে পারে না। সেটা তাদের কাজও নয়। সমাজ যদি সুস্থ না থাকে, রাষ্ট্রও সুস্থ থাকতে পারে না। তা যতই হার্ড হ্যান্ডেডলি ডিল করা হোক না কেন।

বাংলাদেশ একটি যুথবদ্ধ সমাজ। ভাষাগত যুথবদ্ধতায় পৃথিবীতে, কোরিয়ার পরেই আমাদের অবস্থান। ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ বাংলাদেশী বাংলা ভাষায় কথা বলে। শত ভাগ মানুষ এক ভাষায় কথা বলে শুধু কোরিয়াতে। এরকম যুথবদ্ধতা থাকার পর আমাদের জাতীয় একতা ও সহমর্মিতা অত্যন্ত দৃঢ় থাকার কথা। রাজনৈতিক মতপার্থক্য এখানে রেষারেষি ও হানাহানির জন্ম দেয়ার কারণ নেই। বাংলাদেশে শহর বা গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাশাপাশি বসবাস করে।এমনকি একই পরিবারে স্বামী হয়তো বিএনপি সমর্থক, স্ত্রী জাতীয় পার্টির, ছেলে আওয়ামী লীগের। পাশের বাড়ির চাচা গোবেচারা হলেও কোনো না কোনো দলকে ভোট দেন। এটাই বাংলাদেশ। এটাই আমাদের সমাজ। একে ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করার থিওরি অবাস্তব, অসহনীয়। এসব মানুষকে একই গ্রামে, মহল্লায়, এলাকায় বসবাস করতে হয়, করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী-সন্তানকে থাকতে হবে একই ছাদের নিচে। এই যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শেখ হেলালের মেয়ে তার স্বামী আন্দালিব রহমান পার্থর জন্য ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, এটাই আমার দেশ। আবার বেগম জিয়ার ছোট ভাইয়ের ভায়রা লে. জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী আওয়ামী লীগের মহাজোটে গিয়ে নির্বাচন করছেন, তাও বৈচিত্র্যময় সমাজের প্রতিচ্ছবি।

নিজ পরিবারের কথাই বলি। যে দলকে সমর্থন করি, আমার স্ত্রী সেটার ‘উল্টো’ দলের মার্কায় সিল মারেন। আমার ছোট মামাশ্বশুর বঙ্গবন্ধুর এক ঘনিষ্ঠ ও স্নেহধন্য মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের জনসভায় তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সভামঞ্চেই ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। এ দেশের ইতিহাসে তিনি অন্যতম বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। মামার সাথে দেখা হলেই বঙ্গবন্ধুর অনেক অজানা কাহিনী প্রসঙ্গে কথা ওঠে। তখন তিনি স্বভাবতই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া আমার স্ত্রীর বড় ভাই আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। আমি নিজের রাজনৈতিক আদর্শ লুকাই না। তার পরও তো কারো সাথে কোনো দিন রেষারেষি হয়নি। এভাবেই আমাদের থাকতে হবে বাংলাদেশে। মতদ্বৈধতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেও একতার সন্ধান করাই সুস্থ সমাজ গঠনের সবচেয়ে বড় উপাদান। কিন্তু আজ যখন চার দিকে তাকাই, তখন মন ভেঙে যায়। এ কোন বাংলাদেশ দেখছি? সরকারি দলের সমর্থক নয় এমন কারো যেন এ দেশে বসবাস করার অধিকার নেই; চাকরি পাওয়ার, ব্যবসা করার সুযোগ নেই। পদোন্নতি তো অকল্পনীয়। সবকিছুতেই সরকারি দলের সমর্থক কি না তা আগে বিবেচনায় নেয়া হয়। ‘আমাদের লোক’ এই আপ্তবাক্যটিই উঠে আসে নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে। গোয়েন্দাদের দিয়ে খোঁজ নেয়া হয় ব্যক্তিটি আওয়ামী লীগ না বিএনপির! সরকারের সমর্থক নয় এমন মানুষগুলো চাকরি পাবেন না, ব্যবসা পাবেন না- তা যেন স্বীকৃত রীতি। কিন্তু ট্যাক্স নেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকেই কর দিতে হবে! সে ক্ষেত্রে কেউ তো বলে না, সরকার সমর্থকদের বাইরে কারো কাছ থেকে ট্যাক্স নেয়া হবে না!

প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ নূরে আলম সিদ্দিকী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি তার পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন একপক্ষীয় অবস্থা দেখেননি। একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ কতটা ক্ষোভে এমন কথা বলতে পারেন? হয়তো সরকারের বাইরে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করাও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বরখেলাফ বলে বিবেচিত হতে পারে করিৎকর্মা আমলাদের কাছে। এখন আমাকেও এই লেখার সময় চিন্তা করতে হচ্ছে কী লেখা প্রয়োজন তা নিয়ে নয়, কী লিখব না বা কী লেখা যাবে না তা নিয়েই রয়েছে সংশয়, আতঙ্ক। মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভও অন্য যে কারো ক্ষোভের কারণ হতে পারে। স্বাধীন দেশের নাগরিক যদি মন খুলে কথাই না বলতে পারেন, তাহলে কি সেই রাষ্ট্রটিকে পুরোপুরি স্বাধীন বলা যায়? আর ব্যক্তি স্বাধীনতার সাথে রাষ্ট্রের স্বাধীনতার কি পার্থক্য আছে?

এবার নির্বাচন নিয়ে যা হচ্ছে তা কি কারো আজানা? নিজ দেশে নির্বাচনে মানুষ প্রচারণা চালাতে পারবে না, নিতান্ত রাজনৈতিক পরিচয় সমর্থনের কারণে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, পায়ে গুলি করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হবে- ক্ষমতায় যাওয়ার ‘নির্বিঘ্ন’ পথ গ্রহণের এ কেমন রাজনীতি? ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কি না মানুষ, তাও কেউ নিশ্চিত নয়। এ কেমন নির্বাচন? কোন ধরনের আইন? কেমন প্রশাসন? একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে কেন এসব পথ গ্রহণ করতে হবে? কী লাভ এতে? কী লাভ ওই পথে ক্ষমতায় এসে? যাদের বিরুদ্ধে এত কিছুর তাণ্ডব, তারাতো এ দেশেরই মানুষ; আপনাদেরই কারো না কারো আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব। তাহলে কেন এহেন আচরণ? প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাই যদি সব কিছু করে তাহলে আপনারা আর আছেন কেন? আপনাদের প্রয়োজনই বা কী?

ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, মুজিবের হাতে গড়া দলটির কি সুষ্ঠু রাজনীতির প্রতি এতই অনাস্থা যে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে কার্যত জনগণকে ঘিরে ফেলতে হবে? কিন্তু এতে কি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের কোনো লাভ বা সুনাম হচ্ছে? ‘সাময়িক সুবিধা’ হচ্ছে বটে। তবে চার দিকে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভের আগুন, কোটি মানুষের হৃদয়ে জমছে অসন্তোষ, সৃষ্টি হচ্ছে বিবমিষার, বাড়ছে নীরব বৈরিতা। যাদের কাজে লাগিয়ে ভিন্ন মতকে স্তব্ধ করা হচ্ছে তারা কিন্তু ভাবছে, তারাই সব। তারা যে সবকিছুই ঘিরে ফেলবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? রাজনীতিতে রাজনীতি নেই, এটা কারো আহ্লাদিত হওয়ার বিষয় নয়। সাধারণ এক শ্রমজীবীর কথায় বলতে হয়- ‘আপনারা পাওয়ারে আছেন’, না ক্ষমতায়?

মুক্তিযুদ্ধে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস একটি বই লিখেছিলেন ‘দি রেপ অফ বাংলাদেশ’ নামে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালে। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন ভারতের গোয়ার খ্রিষ্টান। বাস করতেন পাকিস্তানে। পাক জান্তা বাংলাদেশীদের ওপর বর্বরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার পর তিনি ব্রিটেনে চলে যান। যা হোক, পরবর্তীতে ডক্টর মযহারুল ইসলাম তার বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। বইটি প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি ১৯৭৩ সালের জুলাইয়ে। চুরি করা অপরাধ হলেও বই চুরি বৈধ বিবেচনা করে বইটি আমি মরহুম মামার শেলফ্ থেকে চুরি করেছিলাম যা এখনো আমার কাছে আছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছিলেন ম্যাসকারেনহাস। দি রেপ অফ বাংলাদেশ-এর ভূমিকায় ম্যাসকারেনহাস লিখেছেন- ‘পূর্ব বাংলায় আমি যা দেখেছি, আমার কাছে তা হিটলার ও নাৎসিদের অমানুষিক বর্বরতা সম্পর্কে যা পড়েছি তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ বলে মনে হয়েছে।’

পশ্চিম পাকিস্তানে তার যেসব বন্ধু ছিলেন তারা লন্ডনের সানডে টাইমসে প্রকাশিত, ম্যাসকারেনহাসের রিপোর্ট দেখে তার সাথে বন্ধুত্বের পাটই চুকায়নি, বরং করাচি-লাহোর-রাওয়ালপিণ্ডিতে যাদের সঙ্গে তার জানাশোনা ছিল তারা তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘শুয়োর’ বলে গালি দিয়েছে। এরশাদের আমলে ম্যাসকারেনহাস আরেকটি বই লিখে সাড়া ফেলে দেন বাংলাদেশে। ‘এ লিগেসি অফ ব্লাড’ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের হানাহানি ও সামরিক অভ্যুত্থান জর্জরিত ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। ১৯৭১ সালের হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো যখন মনে পড়ে, তখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। হৃদয়ে হঠাৎ বিঁধে বেদনার তীর। ওইসব অমানবিক ঘটনাকে ম্যাসকারেনহাস রেপ অফ বাংলাদেশ বলেছেন।

আমরা সেই অবস্থা মোকাবেলা করে অর্জন করেছি প্রিয় স্বাধীনতা। কিন্তু এখন মনে হয়, নিজেরাই নিজের মাতৃভূমিকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছি। গণতন্ত্রকে করছি লাঞ্ছিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি এর মর্যাদা আমরা কতটুকু রক্ষা করতে পারছি, তা ভেবে দেখার বিষয়। গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার অধিকারই তো স্বাধীনতা। যে জাতি ‘লাঞ্ছনা’ থেকে মুক্তি পেয়েছে, তারা যেন মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারে সেটাই হোক এ সময়ের চাওয়া পাওয়া। গণতন্ত্রবিহীন স্বাধীনতা যে মরে বেঁচে থাকা!

মূল উপসম্পাদকিয়-টি দৈনিক নয়াদিগন্ত-এর ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ প্রকাশ করা হয়েছিল।

মূল লিঙ্কঃ লাঞ্ছিত গণতন্ত্র

Abu Rushd, Editor in Chief, Bangladesh Defence Journal
Editor in Chief at Bangladesh Defence Journal | Website |  + posts

Abu Rushd, the President of the Institute of Strategy and Tactics Research (ISTR), is a towering figure whose unparalleled experience spans military service, defense journalism, and global intelligence analysis. A former military officer turned investigative journalist, Abu Rushd brings over three decades of expertise in national security, international relations, and defense intelligence, making him an authoritative voice in shaping strategic discourse on global security challenges.

As a pioneer of defense journalism in Bangladesh, Abu Rushd has continuously pushed the boundaries of investigative reporting. He introduced defense and intelligence coverage into Bangladeshi media and established the Bangladesh Defence Journal, the country’s only publication dedicated to these critical issues. His in-depth understanding of intelligence agencies, military operations, and insurgency conflicts is reflected in his eight widely acclaimed books, with works cataloged in prestigious institutions like the University of Chicago, Yale University, and the University of Toronto.

Rushd's fearless journalism has taken him from the conflict zones of Sierra Leone to the reconstruction efforts in South Sudan. He has served as an official media partner at global defense expos, providing high-level analysis and insights into international security operations. His work on intelligence agencies, including his influential book on Indian espionage RAW in Bangladesh, stands as a testament to his commitment to uncovering hidden geopolitical forces.

As the President of ISTR, Lt. Abu Rushd's leadership reflects a rare combination of military precision, investigative rigor, and intellectual boldness. His visionary approach is essential for advancing strategic research that influences policy and shapes the future of global security.

Popular

Latest